নিউজ ডেক্স: সায়াহ্নে এসে পদবাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির বিরুদ্ধে। সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে অর্থের বিনিময়ে অন্তত ৫০০ থেকে ৮০০ জনকে পদ দেয়ার অভিযোগ করছেন। নেতা-কর্মীরা বলছেন, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি তিন বছরের জায়গায় পাঁচ বছরে পড়েছে। তার ওপর গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করে এত জনকে পদ দিয়ে কমিটির কলেবর বাড়ানো হয়েছে। স্বয়ং সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকও বলতে পারবেন না এখন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে কতসংখ্যক সদস্য রয়েছেন।
গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির আকার হওয়ার কথা ৩০১ সদস্যবিশিষ্ট। কমিটির মেয়াদ তিন বছর।
ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা জানান, গত ৩১ জুলাই সহসভাপতি, সহসম্পাদক, বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক উপসম্পাদক এবং সদস্য পদ দিয়ে অনেককে চিঠি দেয়া হয়। পদ পেয়ে অনেকেই নিজ নিজ ফেসবুক প্রোফাইলেও সে খবর পোস্ট করেন। নিউজবাংলার অনুসন্ধানেও এর প্রমাণ পাওয়া যায়। এই প্রতিবেদকের কাছে এমন পাঁচটি চিঠির কপি রয়েছে। ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যও বিষয়টি স্বীকার করেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছাত্রলীগের কয়েকজন সহসভাপতি, দুজন সাংগঠনিক সম্পাদক ও বেশ কয়েকজন সহসম্পাদক অভিযোগ করেন, কমিটির মেয়াদের শেষ দিকে এসে বঞ্চিতদের পদ দেয়া একটি রেওয়াজ। কিন্তু এবার যা হয়েছে সেটা ন্যক্কারজনক। কেননা ছাত্রলীগে অবদান আছে সব মিলিয়ে বৈধভাবে এমন সংখ্যা ৫০ জনের বেশি হবে না। কিন্তু এবার পদ দেয়া হয়েছে আট শতাধিক।
এ বিষয়ে লেখক ভট্টাচার্য নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এটা ছাত্রলীগের দীর্ঘদিনের প্র্যাকটিস। বিগত কমিটিগুলোও আকারের বাইরে অনেককে পদ দিয়ে সংযোজন করত।
‘ছাত্রলীগে হাজারও নেতা-কর্মীর অবদান রয়েছে। কিন্তু কেন্দ্রীয় কমিটিতে সবাইকে পদ দেয়া সম্ভব হয় না। বাদ পড়াদের বিভিন্ন কমিটিতে পদায়নের চেষ্টা করা হয়। তারপরও যারা বাকি রয়েছেন তাদের রাজনৈতিক স্বীকৃতি দেয়ার জন্যই এসব পদ দেয়া হয়েছে।’
তবে কোনো ধরনের পদবাণিজ্যের কথা অস্বীকার করেন লেখক।
কতজনকে ৩১ জুলাই পদ দেয়া হয়েছে জানতে চাইলে লেখক সঠিক সংখ্যা বলতে পারেননি। তিনি বলেন, ‘তালিকা সংরক্ষিত আছে। সেটা দেখে বলতে হবে।’
পদবাণিজ্যের এই অভিযোগ সম্পর্কে বক্তব্য জানতে ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়ের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন ধরেননি।

২০১৮ সালের মে মাসে সম্মেলন হলেও ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করা হয় জুলাইয়ে। এতে সংগঠনটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান রেজওয়ানুল হক চৌধুরী ও গোলাম রাব্বানী। পরবর্তী সময়ে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে পদ হারান দুজন। তাদের স্থলে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হয় আল নাহিয়ান খান জয় ও লেখক ভট্টাচার্যকে। ২০২০ সালের ৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে জয় ও লেখককে ‘ভারমুক্ত’ করা হয়। তাদের দুজনকে মেয়াদের বাকি সময় দায়িত্ব চালিয়ে যেতে বলা হয়।
জয়-লেখক নেতৃত্বাধীন কমিটির মেয়াদ শেষ হয় ২০২১ সালেই। কিন্তু করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে তখন সম্মেলন হয়নি। ২০২১ সালের শেষের দিকে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু হলেও সম্মেলনের উদ্যোগ নেননি জয়-লেখক। এ অবস্থায় ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায় থেকে সম্মেলনের দাবি ওঠে।
নেতা-কর্মীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এ বছরের মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে ছাত্রলীগকে দ্রুত সম্মেলনের তারিখ ঘোষণার নির্দেশ দেন অভিভাবক সংগঠন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। কিন্তু জয় ও লেখক সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা নিয়ে টালবাহানা শুরু করেন।
দ্রুত সম্মেলনপ্রত্যাশীরা গত ১৪ মে সম্মেলনের তারিখ ঘোষণার দাবি নিয়ে মধুর ক্যান্টিনে জয় এবং লেখকের সঙ্গে উচ্চবাচ্যও করেন। এরপরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঘটে ছাত্রদলের ‘তথাকথিত’ আগমন। মারামারিতে লিপ্ত হয় দুই সংগঠন, হাওয়া হয়ে যায় ছাত্রলীগের সম্মেলন নিয়ে আলোচনা।
তবে সম্মেলন অচিরেই অনুষ্ঠিত হবে বলে নিউজবাংলাকে জানান অভিভাবক সংগঠন আওয়ামী লীগ থেকে ছাত্রলীগের দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত চার নেতার অন্যতম বি এম মোজাম্মেল হক। তিনি বলেন, ‘করোনার কারণে গত দু’বছর ছাত্রলীগের সম্মেলন করা সম্ভব হয়নি। শোকের মাস আগস্টে আওয়ামী লীগ ও সংশ্লিষ্টরা কোনো সাংগঠনিক কর্মসূচি পালন করে না।’
আগস্ট মাস পার হলে ছাত্রলীগসহ আওয়ামী লীগের আরও কিছু সহযোগী সংগঠনের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান আওয়ামী লীগের অন্যতম এই সাংগঠনিক সম্পাদক।
ছাত্রলীগের দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত চার নেতার আরেকজন আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান এ বিষয়ে কিছু জানেন না বলে নিউজবাংলাকে জানান। তিনি বলেন, ‘গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কোনোভাবেই ৩০১ জনের বেশি সদস্য ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে থাকতে পারে না।’
তথ্যসূত্র-newsbangla24.com